দিনে দিনে আমরা যতোবেশি অনলাইন নির্ভর যাপন করছি, ততোই বাস্তব জীবনের মতো অনলাইন জীবনের (Online Life) নিরাপত্তাও নানারকম অপরাধীদের অত্যাচারে বিঘ্নিত হচ্ছে। Web2 এর সুবিধা নিতে গিয়ে ইদানীং আমরা বিভিন্ন সাইটে নিজেদের নাম, ঠিকানা, পাসওয়ার্ড দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছি। আর সাইবার অপরাধীরা আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। চেষ্টা করছে অর্থনৈতিক ক্ষতি করার।
সাইবার অপরাধী (Cyber criminal) তথা নীতিহীন হ্যাকাররা (Unethical hackers) আমাদের পাসওয়ার্ড চুরি করার জন্য সবসময় মুখিয়ে থাকে। তাই পাসওয়ার্ড রক্ষা করাটা অনলাইন জীবনে সতর্কতার একটি আবশ্যক অঙ্গ হয়ে পড়েছে। এই জটিল সমস্যা থেকে যেন কোন মুক্তি নেই। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন থাকি, তাহলে নিজেদের পাসওয়ার্ড চুরি হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারি।
Day by day online life is going to face very critical situation.
Phishing এই শব্দটি হ্যাকারদের সৌজন্যে প্রায়ই খবরের শিরোনাম হচ্ছে। এটা খুবই একটি সাধারণ পদ্ধতি যার মাধ্যমে আপনার একাউন্টের যাবতীয় তথ্য তারা হাতিয়ে নিয়ে নেয়। তাই বিভিন্ন সাইটে নিজের অনলাইন একাউন্টের তথ্যাবলী নিরাপদ রাখতে কিছু সাধারণ অভ্যাসে এখন থেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। এই বিষয়ে অফিসিয়াল জিমেইল ব্লগে সম্প্রতি একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করা হয়েছে।
Phishing is a common word which is coming in news by unethical hackers.
এই বিষয়ে অফিসিয়াল জিমেইল ব্লগের প্রধান পরামর্শগুলো হল:
১। একই পাসওয়ার্ড বেশিদিন ব্যবহার করবেন না। নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
২। সিকিউরিটি প্রশ্নটাকে পরিবর্তন বা জটিল করে তুলুন।
৩। সেকেন্ডারি ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার করুন।
৪। সবচাইতে আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য ব্রাউজার ব্যবহার করুন। ফায়ারফক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবচাইতে শক্তিশালী। এখানে ক্লিক করে এখনই ডাউনলোড করুন।
The best and security featured browser is firefox.
নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবচাইতে সঠিক ও কার্যকরী পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করাটাই প্রথম পদক্ষেপ। আর তাই দেখা গেছে অনেক ভালো পাসওয়ার্ড ব্যবহারকারীকে যথোপযুক্ত নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়নি। এক্ষেত্রে নিকটজনরাই ক্ষতি করেছে সবচাইতে বেশি। ফলে যে পাসওয়ার্ডটি আপনার কাছে হয়তো জটিল মনে হয়েছে, তা জেনে ফেলা নীতিহীন হ্যাকারদের কাছে অতটা কঠিন মনে হয়নি। তাই এমন একটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যা আপনার কাছে মনে রাখা সহজ হলেও হ্যাকাররা যেন তা আন্দাজ করতে না পায়। এরকম কিছু পাসওয়ার্ডের পরামর্শ আজ আমি আপনাদের সামনে আলোচনা করবো। Don't use same password in various site. Use unique password for every network site.
সমস্যা ০১: একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা
দেখা গেছে যে অনলাইনের বিভিন্নরকম সার্ভিস যারা ব্যবহার করেন, তারা সবক্ষেত্রেই একই পাসওয়ার্ড প্রদান করছেন। ইমেইল, অনলাইন ব্যঙ্কিং, সামাজিক সাইট, অনলাইন দোকান সবজায়গায় একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা খুবই বিপদজনক। যদি কেউ এই পাসওয়ার্ডটি কোনরকমে জেনে ফেলে, তাহলে তার পক্ষে সমস্ত তথ্য, তথা ব্যক্তিগত মেইল, বিভিন্ন গোপন তথ্য এমনকি আপনার টাকার খোঁজ পাওয়াটাও সহজ হয়ে যাবে। Never share your personal data with unwanted person. He or she can steal your everything.
সমাধান: সবসময় অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন
গুরুত্বপূর্ণ একাউন্টগুলোতে আলাদা আলাদা অনন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাটা ভালো অভ্যাস। ইমেইল, ব্যঙ্কিং বা টাকাপয়সা লেনদেন হয় বা ব্যক্তিগত পরিচিতি থাকে এমন কোন সার্ভিসে আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। যখন যে সাইটের একাউন্ট তৈরি করবেন, তখন সেই সাইটের সাথে সম্পর্কিত কোন শব্দ কল্পনা করুন। এই শব্দটির সাথে মিলে আরও কোন শব্দ বেছে নিন। দুটোকে একসাথে মিলিয়ে ফেলুন। উল্টেপাল্টে দিন। ঠিক হুবহু কোন শব্দ ব্যবহার করবেন না। যেমন Facebook হলে bookface ব্যবহার করতে পারেন বা তার সাথে সম্পর্কিত কোন বাক্য ভাবতে পারেন। আপনার পছন্দের সাইটটির নাম কিংবা কল্পনায় যে বাক্যটি ভাবছেন, তা যদি অনেক বড় হয়, তাহলে শব্দগুলোর প্রথম বর্ণগুলোকে একখানে করুন। এই পাসওয়ার্ডটিকে শক্তিশালী করার জন্য মাঝের কয়েকটি শব্দ বড়হাতের (Uppercase) করুন, মাঝে মাঝে দুএকটি সংখ্যা বা চিহ্ন বসিয়ে দিন। যেমন বাক্যটি যদি এমন হয় যে I love Bangla very much তাহলে পাসওয়ার্ডটি এভাবে তৈরি করুন: i4L(b)V-m# এই পাসওয়ার্ডটি যদিও মাত্র ১০টি বর্ণের, তারপরও কিন্তু জটিলতার দিক থেকে এটা খুবই শক্তিশালী। (হুবহু এই পাসওয়ার্ডটি কোথাও ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ রইল)Made a longer password which is hard to guess. Use letters, numbers, or symbols, wildcard, numerics and uppercase or lowercase letters to build a smart password.
সমস্যা ০২: অভিধানে প্রাপ্ত সাধারণ কোন শব্দ ব্যবহার করা
এই ধরণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, অভিধানে বা জনপ্রিয় সাহিত্যের কোন বইয়ে প্রাপ্ত সাধারণ কোন শব্দ পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন password, dhakacity ইত্যাদি। কিবোর্ডের ধারাবাহিক শব্দ যেমন qwertyu, asdfgh, qazwsx ইত্যাদি অথবা বর্ণানুক্রম বা সংখ্যানুক্রম যেমন abcdefg, 123456 ইত্যাদি অনেকে ব্যবহার করেন। এই ধরণের পাসওয়ার্ড ব্যবহার সম্ভাবনার সূত্র ব্যবহার করে সহজেই বের করা যায়। Combine some number, letter, random phrase etc. and make it more then 10 character long.
সমাধান: বর্ণ, সংখ্যা ও চিহ্নের সংমিশ্রণে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
মনে রাখুন যে শুধুমাত্র ছোট হাতের ৮টি ক্যারেক্টার দিয়ে ২৬^8টি সম্ভাব্য পাসওয়ার্ড তৈরি করা যায়। কিন্তু যদি ছোট হাতের বা বড় হাতের মিশ্র বর্ণ, সংখ্যা, চিহ্ন দিয়ে সম্ভাব্য পাসওয়ার্ডের সংখ্যা ৯৪^৮টি। এতগুলো সম্ভাব্য সূত্র মেলানো অনেক বড় হ্যাকারের পক্ষেও খুব কঠিন।
সমস্যা ০৩: ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা
আমরা অনেকেই বন্ধু এবং সহকর্মীদের সাথে ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময় করি। স্বামী/ স্ত্রী, সন্তানের নাম, এলাকার নাম, প্রিয় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর নাম কমবেশি পরিচিত সবারই জানা থাকে। জন্মতারিখ, ফোন নাম্বার অথবা বাড়ির ঠিকানাও জানা থাকে বন্ধুদের। তাই পাসওয়ার্ড তৈরি করার সময় এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। Don't use your familly person's information to make a smart, perfect harder password.
সমাধান: এমন একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করুন যা আন্দাজ করা কঠিন
ব্যক্তিগত তথ্যর সাথে সম্পর্কহীন বিভিন্নরকমের বর্ণ, সংখ্যা এবং চিহ্ন দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। এলোমেলো বর্ণ, চিহ্ন ও সংখ্যা দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করলে তা জেনে ফেলা খুব কঠিন হয়ে পরে। তাই একটি শব্দ ভেবে নিয়ে তার মাঝের দুয়েকটি বর্ণ বড়হাতের করে দিন। দুই একটি সংখ্যা ও চিহ্ন বসান। ১৫ থেকে ২০টির বেশি ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন।
যেমন g9o-o>Gl#eBl~g=gE,rb$lo=G< এই পাসওয়ার্ডটি যে কতটা কঠিন তা হ্যাকাররাই ভালো বুঝতে পারবেন। (হুবহু এই পাসওয়ার্ডটি কোথাও ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ রইল)
This is an another bad habit to write down password anywhere.
সমস্যা ০৪: পাসওয়ার্ড লিখে রাখা এবং তা কোন খোলামেলা জায়গায় রাখা
এটা আরেকটা সাধারণ অভ্যাস যা আমরা অনেকেই করে থাকি। অনলাইনে কারও যদি অসংখ্য একাউন্ট থাকে। যদি তিনি বিভিন্নরকম সাইটে নিয়মিত ভ্রমণ করেন, তাহলে পাসওয়ার্ডের পরিমাণ দিনে দিনে বেড়ে যেতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে হয়তো তিনি বাধ্য হয়েই সবগুলো পাসওয়ার্ড কম্পিউটারে কিংবা কাগজে লিখে রেখে সংরক্ষণ করেন। সমাধান: এমন কোন জায়গায় পাসওয়ার্ডগুলো রাখুন যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয়না। আপনাকে যদি পাসওয়ার্ডগুলো লিখে রাখতেই হয়, তাহলে তা এমন কোন জায়গায় রাখুন যা সহজে বোঝা বা দেখা যায় না। কাগজে লিখলে ড্রয়ারে তালাবদ্ধ করে রাখুন। আর কম্পিউটারে যদি লিখে রাখেন তাহলে ফাইলটির নাম এমন কিছু রাখুন যা থেকে মানুষ তেমন কিছু ধারণা করতে পারবে না। My password জাতীয় কোন নাম দেবেন না। পারলে ফাইলটিকে Hidden করে রাখুন। সমস্যা: পাসওয়ার্ড নতুন করে সেট করা এত বেশি সাইটে আমরা সংশ্লিষ্ট হয়ে গেছি যে অনেক সময় জটিল করে সেট করা পাসওয়ার্ডটি মনে করা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে আমরা নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করার অপশন ব্যবহার করি। সেক্ষেত্রে প্রদত্ত ইমেইল ঠিকানায় নতুন আর একটি পাসওয়ার্ড পাঠিয়ে দেয়া হয় কিংবা গোপন প্রশ্নটি করা হয়। যে ঠিকানায় ইমেইলে নতুন পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে, তা অন্য কাউকে জানানো থেকে বিরত থাকুন। যে গোপন প্রশ্নটি আপনাকে করা হবে তার উত্তর যেন কেউ আন্দাজ করতে না পারে এমন করে প্রদান করুন। তবে কোন কোন প্রশ্ন আছে যার উত্তর অন্যের পক্ষে আন্দাজ করা খুব সহজ। যেমন: আপনার বাড়ি কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তর পরিচিত সবাই জানে। তাছাড়াও জেনে নেয়া কঠিন নয়। সেক্ষেত্রে আপনার এলাকার নাম প্রদান করার সময় তাতে একটু পরিবর্তন আনুন। যেমন Dhaka হলে Dha#ka@ এভাবে রাখুন। সেক্ষেত্রে যিনি পাসওয়ার্ড চুরি করতে যাবেন, তিনি গোপন প্রশ্নের উত্তর জানলেও তা কিভাবে লিখতে হবে তা না জানার কারণে আপনার কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।
আশা করি অনলাইনে নিজের একাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তাটি আপনাদের কাছে পৌছে গেছে। এখন পরামর্শ অনুযায়ী নিজের পাসওয়ার্ডটি নিজেই আরেকবার পরীক্ষা করে দেখুন তো তা সত্যিকারের জটিল কিনা? না হলে বুঝতে হবে, নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার হাতিয়ার আপনি নিজেই অপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
লেখাটি অফিসিয়াল জিমেইল ব্লগ থেকে নেয়া।