ব্লগিং এর একটি বিচিত্র সাফল্য
আমি এক জন অতি সাধারন মানুষ। শখ করেই রান্না বান্না বিষয় নিয়ে এই ব্লগ করেছি। আমার সেই ব্লগ থেকে আমার মেইলে ভারতের মুম্বাই থেকে তেলেগু ভাষী জনৈকা প্রিয়া মিত্র Help me বিষয়ে একটি মেইল পাঠিয়েছিলেন। সে মেইলে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশের এক মেয়ে ১০ বছর ধরে তার বাড়িতে কাজ করছে, এতোদিন সে কিছু বুঝতে পারেনি কিন্তু বর্তমানে সময়ের সাথে সে বেড়ে উঠেছে এবং বুঝতে শিখেছে। এখন সে দেশে তার পরিবারের কাছে ফিরে আসতে চায়। মেয়েটির সাতক্ষীরার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে আমার কাছে তার পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি জানাতে ও তাকে দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে সাহায্য চেয়েই এই মেইল পাঠিয়েছে।আমি থাকি ঢাকায় এবং আমার স্বামী বিদেশে থাকে, তার পুর্বের চাকরীর সুবাদে বেশ অনেক বতসর আমরা মংলায় থেকেছি। সেই সুত্র ধরে তার সাবেক সহকর্মী নির্বাহী প্রকৌশলি শরিফুল ইসলাম এবং উপ সহকারী প্রকৌশলী এবিএম মাসুদ ভাইয়ের কাছে আমি প্রিয়া মিত্রের মেইলটি ফরোয়ার্ড করে দেই এবং যে কয়জনের ফোন নম্বর আছে তাদের সাথে ফোনে আলাপ করে এ বিষয়ে সাহায্যের অনুরোধ জানাই।
পরবর্তীতে তারা ওখানে কর্মরত সাতক্ষীরার কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে প্রিয়া মিত্রের দেয়া ঠিকানা ধরে ওই এলাকার চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে মেয়েটির ভাই হাসান ও বোন হালিমার সন্ধান পেয়ে তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের ফোন নম্বর নিয়ে প্রিয়া মিত্রকে মেইল পাঠায়।
এর পর প্রিয়া মিত্র মুম্বাই থেকে মেয়েটির ভাই হাসানের কাছে ফোন করে মেয়েটিকে কথা বলার সুযোগ করে দিলে এক আবেগ ঘন পরিবেশের সৃস্টি হয়, যা প্রিয়া মিত্র আমাকে সাথে সাথেই মেইল করে জানিয়েছে। এবার সে ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগ করে মেয়েটিকে তার নিজ পরিবারের কাছে নিজ দেশে পাঠাবার ব্যবস্থা নিবে।
এই সমস্ত প্রক্রিয়া সারতে মাত্র ১৬টি মেইল আদান প্রদান হয়েছে এবং কয়েকটি ফোন করতে হয়েছে। পাঠক বন্ধুদের মধ্যে যদি কেউ এ ব্যাপারে বিশদ জানতে আগ্রহী হন তাহলে আমাকে মেইলে জানাবার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি মনে করি ব্লগ করে এটাই আমার পরম প্রাপ্তি, হারিয়ে যাওয়া একজনকে তার পরিবারের সাথে পুনর্মিলন ঘটাতে পেরেছি। সকলকে ব্লগিং করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্যই এই তথ্য এখানে দিয়েছি। আশা করি আমার মত সবাই বিষয়টি উতসাহিত করবেন।
এখানে একটি কথা না বললে নিজেকে অপরাধী মনে হবে, তা হচ্ছে ব্লগ করার ব্যপারে নানা ভাবে প্রভাবিত করে, উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে এবং নানা রকম কায়দা কৌশল শিখিয়ে হাতে ধরে আমাকে সাহায্য করেছেন ‘বাংলা হ্যাকস’, এই সাফল্যের সবটুকু কৃতিত্বই তার আর ভুল ভ্রান্তি দোষ ত্রুটি যা তাই শুধু আমার।
শুভ ব্লগিং। ধন্যবাদ গুগলকে, ধন্যবাদ তাদেরকে যারা ব্লগিং করছেন।
সবাই ভালো থাকুন, সবার জন্য এই শুভ কামনা।
এরকম মহানুভবতা ও মানবিক সহযোগী মানসিকতার মানুষের বড় অভাব আমাদের এই পোড়া সমাজে। একজন মেয়ে সে পাচার বা কোন কারণে হোক বিদেশে চলে গিয়েছিল। ১০ বৎসর পর তাকে তার পরিবারে ফিরে আসার সহায়তা করে 'রান্না করি নিজে' ব্লগের ব্লগার যে উপকার করলেন, তার বর্ণনা সাধারণ বিশেষণে প্রকাশ করা অসম্ভব। তার শুভ মানসিকতাটি সমাজে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো বেশি মানুষ জানুক এই মহত্বের কাহিনী এই প্রত্যাশা থেকেই লেখাটি আমার ব্লগে পুন:প্রকাশ করলাম।