বিগত ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখের এই পোস্টের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু আলাপ হয়েছে দেখে আমিও দলে ভিড়ে যেতে চেয়েচিলাম কিন্তু আমার আলাপ একটু দীর্ঘায়িত হবে বলে ভাবলাম এটা পোস্টিং আকারেই দিয়ে দিই।
ওখানে দেখলাম তিনটি মন্তব্য কে বা কারা করেছেন তাদের নাম পরিচয় জানাননি তবে তারিখ এবং সময় দেখে বক্তব্য গুলি এক জনের বলেই মনে হচ্ছে। যাই হোক এক জনই হউন আর তিন জনই হোক সে প্রসংগ মুখ্য নয়। আমি বলতে চাচ্ছি যে যদি আপনারা নাম পরিচয় জানাতেন তাহলে আলাপ করতে আরো বেশি ভাল লাগত। যাকে দেখতে পাচ্ছি না তার সাথে কি আলাপ চলে বলুন?বেশ কিছুদিন আগে এখানেই জনৈক নাম গোপন রাখা ভাইকে বলেছিলাম নাম জানাবার জন্য তাতে তিনি বলেছিলেন তিনি নাকি এদেশের ওয়েব জগতে বিশেষ পরিচিত এক বিক্ষ্যাত ব্যক্তিত্ব কাজেই এমন ব্লগে তার নাম উল্লেখ করলে নাকি তার মান হানি হবে তাই তিনি নাম গোপন রেখেছেন। বেশ তার মান সন্মান যদি এমন ঠুনকো হয়ে থাকে তাহলে আর কি বলব তাকে সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে না কি বলেন ভাই/বোন?এই যে আপনি এভাবে নিজেকে গোপন রেখে আলোচনা করছেন এটাকে কি বলবেন?এটাও কি এক ধরনের চুরি নয়?অসির চেয়ে মসির শক্তি বেশি এটাতো আর নতুন কথা নয়। লাঠি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিলে সে চিকিতসা করে ঠিক করে নেয়া যায়, কিন্তু কলম দিয়ে মাথা ফাটালে সে আর সহজে কুলিয়ে উঠা যায় না রিতিমত পথে বসতে হয়। দরিদ্রের চেয়ে ধনীর চাহিদাও যেমন বেশি তার চুরি করার ক্ষমতা, কৌশল বা জ্ঞ্যানও বেশি।
আমাদের দেশে ওষুধ কোম্পানি গুলি ক্যাপসুলের ভিতর ময়দা দিচ্ছে, পোড়া মবিল দিয়ে চানাচুর ভাজছে, শুকনো মরিচের সাথে ইটের গুড়ি মিশাচ্ছে, চা পাতা দিয়ে খেজুরের গুরের রঙ করছে, খেজুরের গুরের সাথে চিনি মিশাচ্ছে, মাছে বিষাক্ত ফর্মালিন দিচ্ছে এ কথা এখন আর নতুন কিছু নয়, এ আমার নিজের দেখা। দুধে পানি মেশান আমরা মেনে নিয়েছি শুধু গোয়ালার কাছে একটাই অনুরোধ বাবা নর্দমার পানি না দিয়ে কলের পানি দিও, তাই না?
বিলাতে যে সব মাছ বাংলাদেশ থেকে আসছে ভাগ্য ভাল যে এই মাছ গুলি বাঙ্গালিরা বাদে আর কেও খায় না। যদি এগুলি এদেশের খাদ্য মান নিয়ন্ত্রন কারী বিভাগের নজড়ে আসে তা হলে বাংলাদেশ থেকে তাতক্ষনিক ভাবে এই মাছ আমদানি করা বন্ধ করে দিবে। যেখানে সারা বিশ্বে হিমায়িত মাছ পানি ছাড়া হিমায়িত হয় সেখানে আমাদের দেশ থেকে যা আসে তা বরফের ব্লকে করে আসে, ৫০০ বা ৬০০ গ্রাম ড্রেসিং করা মাছের একটা ব্লকে কোন রকম ভাল একটা টুকরা থাকে বাকি সবই প্রায় কাটা সহ হাবিজাবি দিয়ে ভর্তি তার কিছু আবার পচাও থাকে। মান নিয়ন্ত্রনের কোন বালাই নেই। থাকবেই বা কেন এগুলিতো বাঙ্গালিরাই খাবে তাদের পেট এত নাজুক না। কি করা, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল বলে বাঙ্গালিরা তাই ৩/৪ পাউন্ড দিয়ে কিনে খাচ্ছে। ভাতে মাছে বাঙ্গালি, মাছ না হলে এক বেলা চলে না, খেতেই হবে।
এইতো নাম না জানা ভাই/বোন এখন আপনাকে সম্বধন করা দরকার কিন্তু কি বলে ডাকি?আচ্ছা এই দেশে যার নাম জানা নেই তাকে জন(John) বলে ডাকে, কিন্তু আপনিত আর ইংরেজ নন তা হলে আপনাকে কি বলে ডাকি?আচ্ছা সালাম ভাই বলি?আপত্তি নেইতো?আর বোন হলে সালমা!আচ্ছা সালাম ভাই আমাদের বাঙ্গালিদের দৃষ্টি সীমা কতদূর?এরা চুরি করলে আর কতটাই বা করতে পারে?রিয়া দিদি ইউরোপ আমেরিকা ঘুড়ে দেখে গেছেন তিনি জানেন এসব দেশে কি ধরনের অপরাধ হয়। বড় বড় কোম্পানির নামে কি ভাবে সাধারন মানুষের পকেট খালি করছে। কেন, আমাদের দেশের মোবাইল ফোন কোম্পানি গুলি দেখেন নাই?গ্রামীন ফোন প্রথম দিকে মানুষের পকেট সাফ করেছে।১০ টাকা মিনিট!এখন ২ টাকায় কি করে চলছে?সেই একই লাইনইত তাই না?
জানেন লন্ডনে সাধারন একটা মোবাইল ফোনের জন্য একজন সলিসিটর(উকিল)কে জীবন দিতে হয়েছে। সুপার স্টোর থেকে সিসিটিভি ক্যেমেরা, বারকোড ডিটেক্টরের চোখ এড়িয়ে এদেশের বখাটেরা কি ভাবে চুরি করছে। পণ্যের গা থেকে বার কোড ছিড়ে বা স্ক্রেপ করে মুছে ফেলে দিব্যি মেইন গেটে থাকা বার ডিটেক্টরের সিগ্ন্যাল ফাকি দিয়ে চলে যাচ্ছে। অথচ এদের কিন্তু ভাতের অভাব নেই। কাল কি খাব, ছেলের স্কুলের বেতন দিব কি দিয়ে, ভবিষ্যতে থাকবো কোথায় সে ভাবনা নেই।
বাঙ্গালিদের ইন্টারনেটে চুরির ক্ষমতা আছেই বা কি আর করবেই বা কি?বড় বড় ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ডের চুরি কারা করছে?মেইল স্প্যাম কারা করছে?মাঝে মাঝে ইয়াহু লটারি বা এরকম লটারির ফাদ কারা পাতছে?কিছু দিন আগেই এখানে রিয়া দিদির পোস্টিঙ্গেই দেখেছি, মেইল স্প্যাম, ক্রেডিট কার্ডের সুরক্ষা এই সব পোস্টিং তাতে কোথাও বাংলাদেশি হ্যাকার বা তথ্য চুরির ঘটনা দেখিনি। সেদিন ইয়াহু নিউজে দেখলাম ফেস বুকে আমেরিকান পুরুষ বৃটিশ মহিলার সাথে বন্ধুত্ব করে বছর দুয়েক পর দেখে তার একাউণ্টের ৬০,০০ ডলার নেই, আলাপে আলাপে নানা কথায় ওই মহিলা একাউন্ট নম্ব্র জেনে এই কান্ড ঘটিয়েছে।
বৃটেনের এমপি বা মন্ত্রিরাও তাদের বাড়ি মেরামত, টিভি কেনা, হিটার মেরামত বা ইত্যাদি নামে নানা ভাবে সরকারি তহবিল থেকে অধিক অর্থ দাবি করে। বড় লোকেরা চুরি করলে দোষ হয় না সেটা এলাউন্স নামে চলে যায়। গরীবেরা চুরি করলেই যত দোষ, আরে গরীবেরা চুরি করে পেটের দায়ে।
আমার মেয়ে একদিন সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে লন্ডনের অক্সফোর্ড সার্কাসের কোন এক ক্যাশ মেশিন থেকে ২০ পাউন্ড তুলেছে। কিছু দূর আসার পর ওর মনে হলো কাল বাসা ভাড়া দিতে হবে। আচ্ছা আবার ফিরে ওই মেশিনে কার্ড ঢুকিয়ে ৫০ পাউন্ড তোলার অপশন দিয়েছে আর মেশিন বলছে তোমার একাউন্টে এত টাকা নেই। কি আশ্চর্য! এই একটু আগে দেখলাম ৩০০ পাউন্ডের বেশি রয়েছে, এখন এ কি বলছে!! ভেবে দেখুন এক জন ছাত্রের জন্য ৩০০ পাউন্ড অনেক টাকা। যাক আর কিছু না করে আবার উলটো হেটে তার ব্যাঙ্কের মেশিনে কার্ড ঢোকালে সেই মেশিনও একই কথা বলছে। তখন মেয়ে আমাকে ফোন করে কান্নায় ভেঙ্গে পরার অবস্থা। কি হয়েছে বল, না হলে আমি কি বুঝব?শুনলাম। শুনে বললাম এর মধ্যাই এটা ফ্রড হয়ে গেছে, তুমি চিন্তা করনা কাল সকালেই ব্যাঙ্কে গিয়ে জানাও। ব্যাঙ্কে গেলে ওরা ফ্রড এপ্লিকেশন ফর্ম বের করে ফিল আপ করিয়ে সই স্বাক্ষর রেখে বলল আমরা আমাদের ফ্রড ইনকোয়ারি বিভাগে পাঠাচ্ছি তোমাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাব। দুই সপ্তাহ লাগেনি ৩ দিন পরেই ফোন করে বলল যে তুমি একটু ব্যাঙ্কে আস। হ্যা, আমাদের ফ্রড বিভাগ খুজে দেখেছে তমার এই টাকা ফ্রড হয়েছে। এই নাও তোমার ফ্রড হওয়া ২৭৬ পাউন্ড তোমার একাউন্টে জমা করে দিলাম।
বর্তমানে কম্পিউটারের মাধ্যমে আমেরিকার সরকারি অফিস সহ বেশ কিছু বড় ব্যবসা প্রতিষ্টানের তথ্য চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে সে দেশেরই এক চীনা স্কুল থেকে। এদের কাছে বাঙ্গালিরা কিছুই না, শিশুর মত।
এই যে সারা বিশ্বে এত কম্পিউটারে ইন্টারনেট হ্যাকিং, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর চুরি এত কিছু হচ্ছে তাতে কি বাঙ্গালিদের নাম এসেছে কখনো?বরং বাঙ্গালিরা দেশের বাইরে সততার পরিচয় দিয়েই আসছে। কিছু দিন আগে নিউয়র্কের এক বাঙ্গালি তরুন তার ট্যাক্সিতে ফেলে যাওয়া ২৬,০০০ ডলার ফেরত দেয়ার কাহিনী এই সাইটে প্রচার হয়েছিল। তবে একথা সত্য যে দু দিন বিদেশে থেকে অনেকেই বাঙ্গালি বলে পরিচয় দিতে লজ্জা পায়, ভাতকে রাইস না বললে মানায় না। পোষাক আসাকে চলনে বলনে নিজের স্বকীয়তা বদলে ফেলাটাই পছন্দ করে।
ভাল মন্দ সব জায়গায়ই আছে। যেমন আছে রাত দিন। আমাদের দেশে যা হচ্ছে তার অধিকাংশই হচ্ছে দারিদ্রের কারনে। চুরি করতেও মেধার প্রয়োজন হয়। আমাদের মেধা এখনো সে পর্যায়ে পৌছাতে পারেনি বা পারবেও না কারন আমাদের বাঙ্গালিদের মন এমনিতেই কোমল তারা কঠিন হলেও কত হতে পারে?কিছু দিন আগে বৃটেনের সংবাদ পত্রে দেখেছি ৩/৪ জন কিশোর ছেলে মিলে এক হরিন শাবককে চাপাটি দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে মেরে তামাসা করেছে। আমাদের কোন বাঙ্গালি কিশোরের এমন প্রবৃত্তি হবে না।
নাম না জানা ভাই এবং রিয়া দিদির সাথে এ ব্যাপারে আমার মতের কোন বিভেদ নেই। তারপরেও ভাবছেন হয়ত তাহলে আর এতো কিছু বলা কেন। শুধু তুলনা করার জন্যই এই কাহিনী তুলে ধরলাম। নাম না জানা ভাইকে অনুরোধ করছি আসুননা ভাই আমারা পরিচিত হই, সবাই সবাইকে জানি, চিনি একটা সু সম্পর্ক তৈরী হোক।