মূল একটিই নিয়ম - আপনার ক্রেডিট কার্ডের নম্বর, মেয়াদ ফুরানোর মাস ও বছর, এবং কার্ডের পেছনে কার্ডের নম্বরের পাশে লেখা তিন সংখ্যার যে নম্বর সেটি কাউকেই জানাবেন না। চার সংখ্যার পিন নম্বর কেউ জেনে গেলেও তা বদলাতে পারবেন, কিন্তু এইগুলি কেউ জানলে তা আর বদলানো যাবেনা যতোক্ষণ না ক্রেডিট কার্ডটিই সম্পুর্ণ বদলে ফেলবেন। পিন নম্বর কেউ জেনে গেলেও ঘাবড়াবেন না বেশি, মূল কার্ডটি যতোক্ষণ আপনার কাছে থাকছে ততোক্ষণ ভয়ের কিছু নেই। কার্ড খোয়া গেলেই ২৪ ঘন্টার হেল্পলাইনে ফোন করে কার্ড নিষ্ক্রিয় করতে অনুরোধ জানান। সম্ভব হলে সেদিনই, নয়তো পরেরদিন সকালেই থানায় গিয়ে ডায়রী করে তার কপি জমা দিন ব্যাঙ্কে এবং নতুন কার্ডের আবেদন করুন। বিদেশে বসে এই প্রয়োজন হলে আপনার ব্যাঙ্কের নম্বরে ফ্যাক্স করে বার্তা পাঠাবেন, এর জন্য বিদেশযাত্রার আগেই প্রয়োজনীয় ফ্যাক্স নম্বর সাথে নেবেন। কার্ড পাউচ অথবা অন্য কোথাও কার্ডের পিন নম্বর লিখে রাখবেন না।
বিশেষ পরামর্শ হিসেবে আমি বলবো যে, ব্যাঙ্কে আবেদন করে ফটো ক্রেডিট কার্ড বানাতে দিন। কিছু কিছু ব্যাঙ্ক এর জন্য বাড়তি টাকা নেয়, কিন্তু এটা জরুরী জিনিস। সেক্ষেত্রে কার্ডের পেছনে স্বাক্ষর করবেন না। কার্ড হারালেও কেউ অন্য দোকানে দিয়ে মাল কিনতে পারবেনা, ছবির জন্য আটকে যাবে। স্বাক্ষর না থাকলেও দোকানী আপনাকে আপনার ছবি দিয়েই চিনবে। পিন নম্বর লিখে না রাখলে কার্ড হারালেও এটিএম থেকে কেউ টাকা তুলতে পারবেনা। তাই নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অনেকটাই সময় পেয়ে যাবেন আপনি।
আজকাল ছোটখাটো অনেক দোকানেই ক্রেডিট কার্ড নেয়। পথের ধারে অনেক গ্যাস ফিলিং স্টেশনেও কার্ড নিচ্ছে। প্রচুর রেঁস্তরায় কার্ডে খাদ্য ও পানীয়ের দাম দেওয়া যাচ্ছে। যেকোনো দোকানে, রেঁস্তরায় কিম্বা গ্যাস ফিলিং স্টেশনে গিয়ে কার্ড ব্যাবহার করবেন না। একটু বড় জায়গায় নাহলে কার্ড ব্যাবহার না করাই ভালো। আজকাল অনেক জালিয়াতি চক্র ছোটখাটো জায়গার সাথে হাত মিলিয়ে কার্ড পাঞ্চিং মেশিনে গণ্ডগোল পাকাচ্ছে। ATM Skimmer নামের এক জিনিসের দ্বারা ক্রেতাদের কার্ডের সব তথ্য তারা নিচ্ছে যা magnetic stripe'এর মধ্যে আছে, এবং পরে MSR মেশিন দিয়ে সম্পুর্ণ নতুন কার্ড তারা ছাপিয়ে নিচ্ছে। এটি হলেই বিপদ। নতুন কার্ড ছাপানোর যন্ত্র চোরাপথে বাংলাদেশেও ঢুকে পড়েছে। আপনার কার্ডের সম্পুর্ণ নকল কেউ বানানোর অর্থ তার হাতেও সেইসব ক্ষমতা যা যা আপনার আছে।
কিভাবে হচ্ছে এইসব? রেঁস্তরায় খাওয়াদাওয়ার শেষে ওয়েটারের হাতে কার্ড দিলেন বিল বানিয়ে আনার জন্য, সে কাউন্টারে যাওয়ার পথেই পকেটে থাকা আরেক মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে নিচ্ছে। তাতে বাড়তি বিল করছেনা, কিন্তু কার্ডের সব তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে। কোথাও বাইরে থাকতে গেলেন, সেই হোটেলেও এই ঘটনার সম্মুখিন হতে পারেন। গ্যাস ফিলিং স্টেশনে গাড়িতেই বসে কর্মচারীকে কার্ড দিলেন বিল করে আনার জন্য। এইসব সুযোগ নেয় অসাধু লোকজন।
তাদেরকে ধরা কঠিন হয়। কারন আপনার কার্ডের তথ্য পেয়েই তারা চুরি করেনা, তথ্য নিয়ে একমাস দুইমাস অপেক্ষা করে। এর মাঝে আপনি আরো অনেক ব্যাবহার করে ফেললেন কার্ড। তার পরে তারা চুরি করলো। পুলিশ অপরাধীকে খুঁজতে সময় লেগে যাবে অনেক। পুলিশ এইসব জানে, কিন্তু তারা যতোদিন অপেক্ষা করেছে, তার মাঝে আপনি যতো দোকানে কার্ড ব্যাবহার করেছেন সবখানে তল্লাশি চালাতেই সময় চলে যায় অনেক।
রাতের বেলা এটিএম থেকে টাকা তুলতে হলে সাথে কাউকে নিয়ে যান। একজন বাইরে দাঁড়ান, অন্যজন ভিতরে টাকা তুলুন। এতে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি প্রয়োজনে আপনাকে সাবধান করতে পারবেন। তবু যদি বিপদের সম্মুখিন হয়ে পড়েন, যদি কেউ আপনাকে বন্দুক দেখিয়ে এটিএম থেকে টাকা নিতে যায়, সেক্ষেত্রে আপনার এটিএম পিন নম্বর উলটো দেবেন। ধরুন আপনার পিন যদি হয় ১২৩৪, আপনি বিপদে পড়লে পিন দেবেন ৪৩২১। এতে এটিএম মেশিনের মধ্যেকার এলার্ট ব্যাবস্থা কাছের পুলিশ থানায় এলার্ম বাজাবে। আমি জানিনা এতে কেউ উপকৃত হয়েছেন কিনা, তবে এই পদ্ধতি আছে একটা, তাই জানালাম। তবে এর অন্য বিপদও আছে, চোর যদি বুঝতে পারে যে আপনি কিছু করেছেন যার ফলে টাকা বেরোচ্ছেনা, তাহলে সে আপনাকে গুলিও করে দিতে পারে। তাই আমি খুব জোর দিয়ে বলছিনা যে এটাই করুন। ভেবেচিন্তে করবেন। এটি একটি টেকনোলজি, এর হিতে বিপরীতও হতে পারে! থানা কতোদুর, পুলিশ আসবে কিনা অতো রাতে এইসব আমরা জানিনা। নিজের প্রাণ আগে, সুতরাং...
আপনি যদি অনলাইনে জিনিসপত্র কেনেন, তাহলে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন অনেক। প্রথমতঃ আপনার কম্প্যুটারে নিয়মিত ভাইরাস ও স্পাইওয়্যার এবং অন্যান্য ম্যালওয়্যার ইত্যাদি সার্চ করবেন। পারলে প্রতি সপ্তাহে তা করুন। এর প্রয়োজন আছে। আজকাল আমরা প্রচুর পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যাবহার করি, এছাড়া প্রচুর অজানা ওয়েবসাইটেও যাতায়াত করি। কিসের থেকে কি যে ঢুকবে তা আমরা সর্বদা খোঁজ রাখিনা। তাই কম্প্যুটারে সাপ্তাহিক পরীক্ষার অভ্যাস জারি রাখুন।
সর্বদা নিজের বাড়িতে বসেই জিনিস কিনুন। যতোই প্রয়োজন পড়ুক তবু বাইরে কোথাও থেকে কোনো সাইবারক্যাফে থেকে বসে ক্রেডিট কার্ড, পেপাল কিম্বা ব্যাঙ্ক একাউন্ট ব্যাবহার করে জিনিস কিনবেন না। প্রয়োজন হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসে বাড়ি থেকেই সব কেনাকাটা করুন। সাইবারক্যাফের কম্প্যুটারে থাকতে পারে hidden keylogger যা আপনার প্রতিটি keystroke গোপনে সংরক্ষণ করবে, পরবর্তীতে তা ক্ষতিকারক হতে পারে।
ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইটে আকর্ষনীয় কিছু দেখলেই সেই ওয়েবসাইট থেকে কিনে ফেলবেন না। আরো কিছু ওয়েবসাইটেও দেখুন সেই জিনিস পাওয়া যাচ্ছে কিনা। গুগল সার্চ দিয়ে দেখুন নামীদামী কোনো ব্র্যাণ্ড সেই জিনিস বিক্রি করছে কিনা। তাদের থেকেই কিনুন। একান্তই না পাওয়া গেলে সেই অজানা ওয়েবসাইটের সম্বন্ধে কিছু তথ্য আগে ঘেঁটে দেখুন। যেমন, সেই ডমেইন WHOIS Information খুঁজে বের করে দেখুন কতোদিন ধরে সেই ওয়েবসাইট ব্যাবসা করছে। নতুন ওয়েবসাইট হলে দশবার ভেবে কেনাই ভালো। পুরোনো হলেও আমার ব্যাক্তিগত মতামত যে স্বল্প মানের কোনো ওয়েবসাইট থেকে জিনিস না কেনাই ভালো। কারন? হ্যাকার প্রতিনিয়ত অবিরাম চেষ্টা চালায় যাতে এইসব ওয়েবসাইটের ডাটাবেস্ হ্যাক করে ক্রেতাদের ক্রেডিট কার্ড তথ্যাদি পাওয়া যায়। স্বল্প মানের ওয়েবসাইট অল্প দামী শপিং কার্ট ব্যাবহার করে যা হ্যাক করতে সুবিধা বেশি। তাই নামীদামী ওয়েবসাইটেই জিনিস কিনুন যাদের আন্তর্জাতিক মানের টেকনোলজি আছে, সঠিক মানের টেকনিক্যাল স্টাফ আছে যারা এইসবের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখে। এছাড়াও নজরে রাখবেন ব্রাইজারের এড্রেস বারে http নয়, থাকা উচিৎ https; অন্যথায় সাবধান হয়ে যান।
অনলাইন ব্যাঙ্কিং একাউন্ট অথবা পেপাল ব্যাবহার করার সময়েও সাবধান, ব্রাউজারের এড্রেস বারে সরাসরি নির্দিষ্ট ওয়েব ঠিকানা লিখে তবেই সাইটে প্রবেশ করুন। কোনো ইমেইল কিম্বা অন্য কোনো ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দিয়ে কখনই নয়। পেপাল দিয়ে টাকা পাঠানোর আগে দেখে নেবেন বিক্রেতার 'ভেরিফাইড' স্ট্যাটাস আছে কিনা, অন্যথায় ক্রয় বাতিল করুন।
আমি এইসব ব্যাপারে খুব অভিজ্ঞ নয়, তাই অনেক কিছু জরুরী কথা বাদ যেতে পারে আমার লেখায়, যা যা আমার লেখায় বাদ গেল সেইসব আপনারা মন্তব্যে জানান, পাঠকরা উপকৃত হবেন।