Technology in modern life

ক্যেমেরাঃ এক সময় ছিলো যখন খুবই সাধারন লেন্স লাগিয়ে কাল বাক্সে ফিট করেই ক্যেমেরা হয়ে যেত আমরা ছোট বেলায় যা দেখেছি। তখন ইয়াশিকা ক্যেমেরাই ছিল বিক্ষ্যাত কিন্তু আজ আর তা নেই। এখন ডিজিটাল যুগ, আগের মত এপার্চার, ফোকাস পয়েন্ট, ডেপথ অফ ফিল্ড, ফিল্ম স্পীড এসব সেট করার ঝামেলা নেই ক্যেমেরাই সব কিছু করে নিচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানি এসেছে অদ্ভুত ক্ষমতাশিল ক্যেমেরা নিয়ে, দিনকে দিন এর উন্নতি হচ্ছে। ১ মেগা পিক্সেল থেকে প্রতি দিন বেড়েই চলেছে মেগা পিক্সেলের হিসাব। আজকাল মোবাইল ফোনের সাথেও ১২ মেগাপিক্সেল ক্যেমেরা নিয়ে এসেছে স্যামসাং কোম্পানি। ১০ বা ১২ মেগা পিক্সেল এখন সাধারন মাপের ক্যেমেরা। এর জুম করার ক্ষমতাও বাড়ছে তবে ডিজিটাল জুমের চেয়ে অপটিকাল জুম অনেক বেশি কার্য্যকর।
যে ছবিটি তোলা হচ্ছে তা ক্যেমেরার কত বড় এলসিডি পর্দায় দেখে নেয়া যাবে, যত বড় পর্দা হবে তত বেশি স্পস্ট বোঝা যাবে আমি কি তুলতে যাচ্ছি। আগের ক্যেমেরায় ছবি তুলতে গিয়ে হাত কেপে গেলে ছবিটি ঝাপসা হয়ে যেত কিন্তু এখন আর সে ঝামেলা নেই, হাত একটু কেপে গেলেও ক্যেমেরাই তা ঠিক করে নিচ্ছে এটা করছে এন্টি ব্লার ক্ষমতাসম্পন্ন টেকনিক দিয়ে, যে ক্যেমেরায় অপটিকাল এবং ডিজিটাল এন্টি ব্লার ব্যবস্থা রয়েছে সেটাই ভাল।
ফেস ডিটেকশনঃ বিশেষ করে যখন একাধিক ব্যাক্তির বা গ্রুপ ছবি তোলা হয় তখন দেখা যায় ক্যেমেরার লেন্সের কাছে যে থাকে তার চেহাড়াই স্পস্ট দেখায় কিন্তু আজকাল চতুর ফেস ডিটকশন টেকনোলজি দিয়ে একাদিক জনকে স্পস্ট ছবির আওতায় আনতে পারছে, ক্যেমেরার চারিত্রিক বৈশিস্টে যত বেশি ফেস ডিটেকশনের সংখ্যা থাকবে তত বেশি জনকে স্পস্ট দেখাতে পারবে।
ডিজিটাল ক্যেমেরার একটা সমস্যা ছিল যে চোখের মনি লাল হোত কিন্তু আজকাল এই সমস্যা প্রায় সব কোম্পানিই দূর করে দিয়েছে কাজেই এটা নিয়ে ভাবার কোন দরকার নেই যদিওবা কখনো কোন ভাবে হয়েই যায় তাহলে প্রিন্ট করার আগে দেখে নিয়ে কম্পিউটার দিয়ে আবার তা ঠিক করা যায়।
আর একটি বৈশিস্ট দেখা যায় আইএসও, এই আইএসও সর্ব নিম্ন ১৬০০ হয়ে থাকে তবে যত বেশি হবে তত কম আলোতে ছবি তোলা সম্ভব হবে।
ব্যেটারির মধ্যে দেখবেন ডাবল AA বা AAA সাইজের ব্যেটারি বা লি-আয়ন Li-ion ব্যেটারি আছে এর মধ্যে লি-আয়ন ব্যেটারি যাতে থাকে সেটাই ভালো, অনেক দিন চলে বলে খরচ কম। তবে একবারে চার্যেবল ব্যেটারি এবং তার সাথে একটা চার্যার কিনে নিলে এতেও খরচ কম হয়।
তারপর ওয়াইড এঙ্গেলঃ এর কাজ হচ্ছে ক্যেমেরা দিয়ে কত কাছে থেকে কত বেশি এলাকার ছবি তোলা যাবে। এটি নির্ভর করে লেন্সের ক্ষমতার উপর। ক্যেমেরার সামনে লেন্সের পাশে দেখা যায় লেন্সের মাপ লেখা থাকে। বিষয়টি একটি জটিল হিসেব নিকেশের ব্যাপার, এ ব্যাপারে সময় পেলে পরে এক সময় আলাপ করবো।
আজকাল ওয়াটার প্রুফ, শক প্রুফ ক্যেমেরা সাধারন ভাবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যা দিয়ে আপনি পানির নিচে গিয়েও ছবি তুলতে পারবেন, হাত থেকে নিচে পরে গেলেও কিছু হবে না বা কোন দাগও পরবে না।
জুম করার জন্য, বিভিন্ন এফেক্ট বা মনের মত রঙ সংজোযন করার জন্য, সুর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি নিয়ন্ত্রনের জন্য বা ক্যেমেরার সাথে যে লেন্স রয়েছে তাতে যতটুকু মাপের ছবি আসছে তার চেয়েও বেশি বিস্তীর্ন এলাকার ছবি নিতে চাইলে আপনি আলাদা লেন্স সংযুক্ত করতে পারেন। এজন্য আপনাকে আপনার ক্যেমেরার লেন্সের সাথে মিলে যায় অর্থাৎ লাগানো যায় এমন লেন্স বেছে নিতে হবে, সে হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন না এক্ষেত্রে আপনি কোন লেন্স চাচ্ছেন তা দোকানিকে বললে সেই দেখিয়ে দিবে।
এই গেল সাধারন ক্যেমেরা, এছাড়া রয়েছে ‘এস এল আর’ ক্যেমেরা তবে এগুলি সাধারনত যারা পেশাদার ফটোগ্রাফার যেমন ফটো সাংবাদিক বা যারা অন্য কোন ভাবে ছবি তোলার পেশার সাথে জরিত তাদের জন্যই। এগুলি দিয়ে পিছনের ছায়া নিয়ন্ত্রন করা থেকে দৃশ্য সনাক্ত করন সহ হাই ডেফিনেশন মুভি তোলা সম্ভব। অনেক কিছুই করা যায় এই ক্যেমেরা দিয়ে। এগুলির অনেক দাম বলে সাধারন ব্যাক্তিগত বা সৌখিন ভাবে ছবি তোলার জন্য প্রয়োজন মনে করি না। তবে কারো সংগ্রহের সাধ্য থাকলে সে ভিন্ন কথা।

আজকাল ডিজিটাল ক্যেমেরা এসে অপ্টিক্যেল ক্যেমেরার প্রচলন কমে গেলেও তার আবেদন কোন দিন কমবে কিনা বিশেষ করে ছবি বড় করার জন্য বা পেশা গত ভাবে যারা ছবি তুলেন তাদের জন্য এই অপটিক্যেল ক্যেমেরা বিশেষ জরুরী। সব ডিজিটাল ক্যেমেরা দিয়ে তোলা ছবি বেশি বড় করা সম্ভব নয়। কিন্তু ১২০ মিমি সাইজের ফিল্মে অপটিক্যাল ক্যেমেরা দিয়ে তোলা ছবি আপনি যে কোন সাইজেই বড় করে নিতে পারবে্ন।
এবার আসছি ছবি তোলার কিছু কৌশল নিয়েঃ অনেকের ধারনা যার বা যে বিষয়ের ছবি তোলা হচ্ছে তা ক্যেমেরার ভিউ মিররে বক্সের ভিতর দিয়ে বা এলসডি স্ক্রীনে দেখে শাটার টিপলেই ছবিতোলা হয়ে গেল। কিন্তু আসলে তা নয়। ছবি তোলার জন্য সর্ব প্রথমে যা প্রয়োজন তা হচ্ছে একটা শৈল্পিক মন। পরিবেশ পরিস্থিতি বা চারিপাশের দৃশয় যাই থাকুক তার সাথে শৈল্পিক মনের মাধুরি মিশিয়ে আপনার বিষয়কে (যার বা যেটার ছবি তুলছেন) সাজিয়ে নিয়ে শাটার টিপুন। যেমন পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন দেখাচ্ছে, একটু এদিক সেদিক সরে গিয়ে ভিউ ফাইন্ডারে দেখে নিন কোন কোণ থেকে পিছনের দৃশ্য সুন্দর লাগছে, যার ছবি তুলছেন তাকে একটু ডানে বামে বা সামনে পিছনে সরতে বলুন, তার পোষাক যেমন শাড়ির আচল বা ওড়না বা সার্টের কলার কেমন আছে দেখে ঠিক করে নিতে বলুন, মাথার চুল কেমন দেখাচ্ছে দেখে নিন, তার মাথা মুখ একটু উপরে নিচে বা ডানে বামে হেলাতে বলুন, তাকে মুর্তির না দাড়িয়ে সহজ স্বাভাবিক ভাবে দাড়াতে বা বসতে বলুন, একটু হাসি হাসি মুখে থাকতে বলুন, দরকার হলে নিজে কিছু বলে হাসাবার চেষ্টা করুন যা আমিও করি, পাত্র বা পাত্রি হাসতে পারছে না তখন কোন একটা কৌতুক বা হাসির কোন কথা বলে হাসিয়ে দেই আর ক্যেমেরা রেডি আছে ঠিক ঐ ফাকে ক্লিক করে নিই। সব কিছু ঠিক ঠাক হলেই শাটার টিপুন। মনে করুন যার ছবি তুলছেন তার শাড়ির আচলটা বা মাথার চুলের কোন অংশ বাতাসে উড়ছে এমন একটা ছবি হলে সুন্দর হোত সেক্ষত্রে বাতাসের জন্য আকটু অপেক্ষা করুন, একটা নয় পর পর ২ বা ৩ টা শট নিয়ে রাখুন।
তবে যখন আপনি কোন গাছের বা সখের বাগানে সদ্য ফোটা নাইট কুইন ফুলের ছবি তুলবেন তখন কিন্তু তাকে নরে চরে দাড়াতে বা বসাতে পারবেন না, এক্ষেত্রে আপনাকেই নরে চরে দাড়াতে হবে। দূরের কোন মনের মত একটা দৃশ্যের ছবি নিতে চাইলে প্রথমে লক্ষ করুন আলো কোন দিক দিয়ে আসছে, ওই এলাকায় কখন যথেস্ট আলো থাকে তখন ছবিটি তোলার চেস্টা করুন।এখানেও একটু ঘুড়ে ঘুড়ে ভিউ ফাইন্ডারে দেখুন কোন অবস্থান থেকে সুন্দর ভিউ আসছে। দুরের গাছটা যদি ছবির একটা পাশে থাকে তাহলে ভালো দেখায় নাকি মাঝখানে থাকলে পাশের দৃশ্য ভালো দেখায় সেই অনুযায়ি ব্যবস্থা নিন।
ছবি হচ্ছে একটা নীরব সঙ্গীত কাজেই আপনার তোলা ছবিটি যে দেখবে সে যেন এমনই মনে করে এই ভাবনা মাথায় রেখে ছবি তুললে তা সুন্দর হবেই। আশে পাশের রঙের দিকেও খেয়াল রাখুন। সুনেছি সত্যজিত রায় তার এক সিনেমার জন্য একটা দৃশ্য এমন চাইছিলেন যে একটা প্রজাপতি ফুলের উপর এসে বসছে। এই রকম দৃশ্য নানা কিছুর প্রতীক হতে পারে তাই না? এই ছবি টুকু নেয়ার জন্য তিনি নিজে ক্যেমেরার সেট নিয়ে এক মাস পর্যন্ত প্রজাপতির পিছনে ঘুড়েছিলেন। যার জন্য তার প্রায় সব ছবিই মনে দাগ কাটার মত। কাজেই একটু ধৈর্যও রাখতে হবে।
অনেকেই এমন ছবি তুলেন যে যার ছবি তুলেছেন তার মাথার কিছু অংশ বা কান বা নাক নেই, একটা হাত নেই এদিকটা বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখতে হবে। আর একটা জরুরী কথা হচ্ছে ক্যেমেরার লেন্স সবসময় মাটির সাথে সমান্তরালে রাখুন ক্যেমেরা কাত করে ছবি তুলবেন না, এভাবে তোলা ছবি খুবই খারাপ দেখায়। যার ছবি তুলছেন তার মাঝামাঝি লেভেলে রাখুন, দরকার হলে নিজে মাটিতে বসে পরুন। ছবির এঙ্গেল ঠিক রাখার জন্য আমাকে প্রায়ই মাটিতে শুয়ে পরতে হয়, কাপড়ে ধুলো লাগে দাগ লাগে তবুও ছবিতো সুন্দর হয়। এখনতো ছবি তোলা কত সহজ করে দিয়েছে কারিগরি কিছুই করতে হয় না, যা করতে হয় তা হচ্ছে একটা শৈল্পিক বিকাশ ঘটিয়ে নিরব সঙ্গীত রচনা করা।
 

পাঠকের প্রতিক্রিয়া

কিছু কথা

সফটওয়ার ও ওয়েবওয়ারের বিভিন্ন টিপ্‌স, টিউটোরিয়াল, হ্যাক্‌স, টেমপ্লেট বা থিম্‌স ইত্যাদি নিয়েই আমি ব্লগ লিখছি। আমার প্রধান আগ্রহ ব্লগিং টিপস। এছাড়াও প্রযুক্তির বিচিত্র বিষয় নিয়ে মত বিনিময়, সমস্যা ও তার সমাধান এবং আলোচনা করার জন্য এই ব্লগ খুলেছি। আশা করি আপনি নিরাশ হবেন না। এই ব্লগের সব লেখাগুলো যেকোন মিডিয়ায় এই লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশ করতে পারবেন। বিস্তারিত পড়ুন....

Search This Blog

© 2009-2014 Bangla Hacks | Design by: Bangla Hacks. Powered by: Blogger