প্রযুক্তির খেলা

অক্টোবর শুরু হয়েছে, শীতের দোষ দেয়া যায় না সে তার আগমনি বার্তা ঘোষনা করে দিয়েছে, যে কোন সময় ঢাক ঢোল পিটিয়েই হোক বা নীরবেই হোক এসে পরবে। এখন  সাবধান হতে হবে আমাদেরকেই। একটু খামখেয়ালি করেই এখনো সামার শু পরেই চলাচল করছিলাম। সেদিন বাসায় ফেরার পথে কি যেন ভাবতে ভাবতে একটু আগে বৃষ্টি হয়ে যাওয়া ভেজা ফুটপাথ ধরে হেটে আসছিলাম হঠাত কি ভাবে যেন পা পিছলে পরে গেলাম আর যা হবার তাই হল কাধে ঝোলানো ব্যাগে থাকা ল্যাপটপ সহ ব্যগটা ঠাস করে আছড়ে পরলো ব্রীজেন্ডের পাথর বিছানো ফুটপাথে। আমি কোন ব্যথা পাইনি তবে ল্যাপটপের কথা মনে করে দুরুদুরু মনে বাসায় এসে পৌছে ল্যাপটপ বের করে দেখি যা ভেবেছি তাই হয়েছে মনিটরের কাচ ভেঙ্গে চানাচুরের মত হয়ে গেছে। মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল, এর চেয়ে আমি নিজে একটু ব্যাথা পেলে কি এমন ক্ষতি হোত? এই ল্যাপটপই যে আমার এক মাত্র সঙ্গি, এদেশে কিছু মেরামত করতে যে খরচ হয় তার সাথে আর একটু বেশি দিয়ে নতুন একটা কেনা যায় অথচ এই মুহুর্তে সে সঙ্গতি আমার নেই। তবে রক্ষা একটাই যে আমার আলাদা একটা ৪০০ গিগা বাইটের হার্ড ড্রাইভ আছে যাতে প্রায় প্রতি সপ্তাহে যা করি তা কপি করে রাখি তাই বিশেষ কিছু হারায়নি সে ব্যাপারে নিশ্চিত। এছারা গত বেশ কিছুদিন যাবত শরীরটাও অসুস্থ যাচ্ছিল বলে মনটা এমনিতেই দুর্বল ছিল।

কদিন পরেই কাজের নতুন জায়গা নিউক্যাসেলে আসতে হোল। এখানে এসেই যে জিনিষের অভাব বোধ করলাম সে হচ্ছে এই একটা কম্পিউটার। বাসায় হাই স্পীড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন রয়েছে অথচ কোন কাজে লাগছে না। মাঝে মাঝে এর ওর কম্পিউটার দিয়ে মেইল গুলি আর দুই একটা প্রিয় সাইটের উপর চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি। কখনো কখনো ইংরেজিতে ২/১টা মন্তব্য করেছি। ইংলিশ কম্পিউটার দিয়ে কি আর বাংলায় লেখা যায়? আমার কম্পিউটার হোল আমার মত পুরো দস্তুর বাঙ্গালি। দেখতে দেখতে নভেম্বর চলে গেল ভাবলাম ক্রিস্টমাসের সময় যখন মানুষের কেনা কাটার ধুম পরবে দোকান গুলি পুরনো মালের স্টক শেষ করার জন্য মুল্য হ্রাস করবে তখনই একটা ল্যাপটপ কিনতে হবে। সেই অপেক্ষায় থেকে আজ অর্থাৎ ক্রিস্টমাসের আগের বিকেলে বের হলাম। গত কয়েক দিন ধরেই প্রচন্ড স্নো পরছে এত মানুষ হাটছে তবুও ফুটপাথের জমা বরফ গলছে না। যে সব রাস্তায় বেশি গাড়ি চলছে সেগুলিতে লবন ছিটিয়ে, স্ক্র্যাপিং করে বরফ সরিয়ে ফেললেও যে রাস্তায় ট্রাফিক কম সে গুলিতে বরফের স্তর জমেই আছে। কনকনে ঠান্ডায় বরফের উপর দিয়ে হেটে হেটে দোকানে এসে দেখি আমার অনুমানের চেয়েও কম প্রায় অর্ধেক দামে আমার পছন্দের Sony vaio laptop বিক্রি হচ্ছে প্রতিটিতেই উইন্ডোজ ৭ ইন্সটল করা রয়েছে। ভালো কনফিগার দেখে একটা নিয়ে বাসায় চলে এলাম। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কাজ। আজ আবার ক্রিস্টমাস সন্ধ্যা বলে সন্ধ্যা ছয়টার পর সব বাস ট্রেন বন্ধ। অফিসের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে, রাতের খাবার দাবার আর ল্যাপটপের ব্যগ নিয়ে অপেক্ষ্যা করছি। একটু পরেই গাড়ি এলো। পনের মিনিটের মধ্যেই চলে এলাম। রাস্তায় তখনো গুড়ি গুড়ি স্নো ঝড়ছে। রুমে এসে বসলাম দেখি ঘড়ের ভিতর তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রীতে এসে রয়েছে সামনে মোটা কাচের দেয়াল কোন পর্দা নেই সব দেখা যায়। হিটার চালিয়ে দিলাম ১ কিলোওয়াটের দুইটা। কাজের সব কিছু দেখে শুনে নেয়ার পর ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম, সেটয়াপ এবং প্রয়জনিয় ইন্সটল করে ঘন্টা খানিকের মধ্যে দেখি ঘড়ের তাপ ১৬ডিগ্রীতে উঠে আর বারছে না, বাইরে স্নোর পরিমান বাড়ছে, রাত বাড়ছে তার সাথে ঠান্ডাও বাড়ছে। পাশের ঘর থেকে আর একটা আলগা হিটার এনে চালিয়ে দিলাম অন্তত ২০ ডিগ্রিতে থাকতে হবে না হলে থাকা যাবে না।
এবার ইন্টারনেটের কানেকশন লাগিয়ে সরাসরি বাংলা হ্যাকসে এসে দেখি এর আগে আমার এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ম্যাক্স আমাকে আইফোন সম্পর্কে লেখার অনুরোধ জানিয়েছে, খুশি হলাম। ভাবলাম শুধু আইফোন কেন বর্তমান বাজারে যা যা দেখা যাচ্ছে তার সব কিছু সম্পর্কেই কিছু কিছু লিখি।

আইফোনঃ  এ সম্পর্কে আমার ধারনা খুব একটা সুখকর নয় এ কথা আগেই বলে রাখি অন্তত প্রস্তুত কারির জন্য। কারন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বলবো এসব হচ্ছে তরুনদের জন্য আমার মত বুড়োদের জন্য নয়, তাই বলে আমার মত কেউ যে ব্যবহার করছে না তা নয়। এটাকে আমার ভাষায় চলমান পকেট কম্পিউটার বলা চলে। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং ডিজিটাল ক্যামেরার বৈশিস্ট সমন্বিত এক নতুন সংস্করন যা কিনা আপনি পকেটে বা হাতে নিয়ে রান্না করা থেকে শুরু করে  যে কোন জায়গায় সাথে নিয়ে যেতে পারেন। এ দিয়ে পথে ঘাটে চলমান অবস্থায় ফোন থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, ওয়েব ব্রাউজিং এবং ছবি তোলার সব কাজই করা সম্ভব। তবে এর টাচ স্ক্রীন এতোই সেন্সিটিভ যে কিছু করতে করতে আসাবধানতা বশত আঙ্গুলের কোন অংশ অন্য কোন ফিচারে স্পর্শ লাগলেই তা সঙ্গে সঙ্গে ওই ফিচারে চলে যায়। আর এগুলিতে এতো বেশি প্রোগ্রাম রয়েছে যা কেবল মাত্র এই সব উন্নত বা ধনি দেশ গুলিতে কাজে লাগে আমাদের দেশে এর সব ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। যেমন জিপিএস বা ই-বের কথাই বলি।
জিপিএসতো বুঝতেই পারছেন ই-বে হচ্ছে বিভিন্ন রকম বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স জিনিসের অনলাইন নিলাম বাজার এখানে এসে আপনি নতুন পুরাতন বা কারো ব্যবহৃত জিনিষ পত্র অনলাইনেই কিনতে পারবেন। আচ্ছা এখন বলুন আমাদের মত উন্নয়নশিল দেশ গুলিতে কি জিপিএস ব্যবস্থা রয়েছে? কবে হবে তার কোন হদিস নেই আদৌ হতে পারে কিনা তাও অনিশ্চিত। গুগল আর্থে এসব দেশের কোন পোস্ট কোড দিয়ে দেখুন ওই পোস্ট কোডের নির্দিস্ট বাড়িটি দেখা যাচ্ছে এমনকি তাতে কয়টা জানালা বা দরজার রঙ কি তাও দেখতে পাবেন অথচ আমাদের দেশে এখনো এমন করে কোন পোস্ট কোড হয়নি। তাহলে সেখানে জিপিএস কোথায় ব্যবহার করবেন? আমার জানা মতে আমাদের দেশের সমুদ্র উপকুলে জাহাজ চলাচল বা আইডব্লিউটিএ কর্তিক জাহাজ চলাচল উপযোগি নদী গুলি জরীপ কাজের জন্য ডেকা নেভিগেশন সিস্টেম রয়েছে, দেশের চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ময়মনসিঙ্হ এই তিনটি স্থানে এর ট্রান্সমিটার রয়েছে যেখান থেকে সিগ্নাল প্রেরন করা হয় এবং আপনার জাহাজের ডেকা নেভিগেটর রিসিভার দিয়ে সেই সিগ্নাল রিসিভ করে জাহাজের অবস্থান জানা যায়।
এর পর আসছি ই-বেতে, আমাদের দেশে কয় জনের ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড রয়েছে যা দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট দিয়ে কেনাকাটা করবেন? যেখানে মানুষের কোন আইডি নেই, অধিকাংশ মানুষের কোন ঠিকানা নেই, ব্যবসার কোন নিশ্চয়তা নেই, বাড়ি ঘরের কোন স্থায়িত্ব নেই, আজ যেখানে দেখেছেন ছেলেরা ফুটবল খেলছে কয়েক বছর পর সেখানে গিয়ে আর চিনতে পারবেন না বা এমনও আছে যে আজ যেখানে দালান কোঠা রয়েছে কয়েক বছর সেখানে রাস্তা হয়ে গেছে। তারপর নদী ভাঙ্গনের কথাতো রয়েছেই এসব করনে আমাদের ম্যাপ ঠিক থাকবে কি ভাবে?। এর পর ধরুন ফেস বুক বা টুইটারের কথা, হ্যা এগুলি ব্যবহার করা যায় তবে যে দাম দিয়ে আইফোন কিনতে হবে আমার মনে হয় তা দিয়ে একটা কম্পিউটার কেনা যেতে পারে।
তবে একটা আশার কথা হচ্ছে এই আইফোন যেদিন চীনে তৈরী হবে সেদিন এমনিতেই এর দাম অনেক কমে যাবে। আমার নিজের অভিজ্ঞ্যতা দিয়ে এর একটা উদাহরন দিচ্ছি, ২০০৪ সালে আমি একটা সাধারন  নোকিয়া সেট কিনেছিলাম ৬০ পাউন্ড দিয়ে কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক পরই দেখলাম এর দাম কমে মাত্র ২৫ পাউন্ড হয়েছে। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল আহা আর কটা দিন পরে কিনলেইত ৩৫ পাউন্ড বেচে যেত, কম কথা? আমি আফসোস করছি এমন সময় আমার এক পরিচিত জন ২৫ পাউন্ড দিয়ে সেই সেট কিনে আনলো তখন দেখলাম সেই সেট থাইল্যান্ডে তৈরী এবং ব্যাটারি চীনের তৈরী, অথচ আমারটা জার্মানির তৈরী এবং ব্যাটারি হাঙ্গেরির তৈরী। বুঝুন এবার। সেই সেট আমি এখনো কোন রকম ত্রুটি ছাড়াই ব্যবহার করছি।
কয়েক বতসর আগে আমি যখন স্কটল্যান্ডের ওবান শহরে ছিলাম তখন কোথাকার যেন এক মোবাইল ফোন  ডেভেলপিং কোম্পানির ভারতের অফিসের এক পদস্থ প্রতিনিধির সাথে আমার আলাপ হয়েছিল। উনার বাড়ি কোলকাতায়, আমি যে বাসায় থাকতাম তার পাশেই এক হোস্টেলে উঠেছিলেন। একদিন আমি বাসায় ফিরছি তখন উনি পিছন থেকে ডেকে বললেন দাদা কি বাঙ্গালি? হ্যা। এইতো আলাপ হোল। ভদ্রলোক লন্ডন এসেছিলেন তার কোম্পানির কিছু প্রডাক্টের নমুনা নিয়ে আর সেই সাথে এখানকার বাজারে কি ধরনের মোবাইল চলছে তাই জরীপ করার জন্য। তার কাছেই জানলাম তারা কি ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে সবার আগে চমক দেখাতে পারে। এই যে সারা পৃথীবির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর এত এত ইঞ্জিনিয়ার, ডিজাইনার বের হচ্ছে তারা কি করছে? অন্যেরটা দেখে নিজের কিছু উদ্ভাবনি চিন্তা যোগ করে, এসব জিনিষ ব্যবহার করতে গিয়ে আরোও কি কি সুবিধা থাকলে ভালো হয় তা ভেবে এবং যে সব টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে তা দিয়ে আর কি কাজ করা যায় এই সব নানা রকম পরীক্ষা নীরিক্ষা করে কে কার আগে সেই জিনিষ বাজারে পৌছাতে পারবে এই নিয়েই রাত দিন গবেষনা চলছে।
আজকের এই খবরটা দেখতে পারেন, ফায়ারফক্স ব্রাউজার এখন নোকিয়া  N900  তে এসে গেছে।
মুল কথা হচ্ছে কেউ ভাববেন না যে আমি এই টেকনোলজি ব্যবহার করতে নিরুতসাহিত করছি। যারা উচ্চ মুল্যের কাছে যেতে পারছেন না তাদের শুধু একটু ধৈর্য্যের সাথে অপেক্ষা করতে বলছি মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে সব কিছুই হাতের একে বারে কাছে এসে দাঁড়াবে। আমরা যেহেতু উন্নয়ন শিল দেশের মানুষ আমরাতো আর ইউরোপ আমেরিকার মত বিজ্ঞ্যান হাতে নিয়ে ঘুরতে পারি না, যারা এগুলি বানাচ্ছে তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হবে কি করে?
প্রতি দিন কত যে শত শত বিজ্ঞ্যানের বাহারি চমক বাজারে আসছে তা দেখি আর অবাক হই, অনেক দিন পর যখন আবার কম্পিউটার হাতে পেয়েছি এবার একে একে সব জানাব বলে আশা করছি।                             
 

পাঠকের প্রতিক্রিয়া

কিছু কথা

সফটওয়ার ও ওয়েবওয়ারের বিভিন্ন টিপ্‌স, টিউটোরিয়াল, হ্যাক্‌স, টেমপ্লেট বা থিম্‌স ইত্যাদি নিয়েই আমি ব্লগ লিখছি। আমার প্রধান আগ্রহ ব্লগিং টিপস। এছাড়াও প্রযুক্তির বিচিত্র বিষয় নিয়ে মত বিনিময়, সমস্যা ও তার সমাধান এবং আলোচনা করার জন্য এই ব্লগ খুলেছি। আশা করি আপনি নিরাশ হবেন না। এই ব্লগের সব লেখাগুলো যেকোন মিডিয়ায় এই লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশ করতে পারবেন। বিস্তারিত পড়ুন....

Search This Blog

© 2009-2014 Bangla Hacks | Design by: Bangla Hacks. Powered by: Blogger