ইউনিকোড কি?

ইউনিকোড সম্পর্কে কথা শুরু করার আগে একটু গণকযন্ত্রকে অক্ষর চেনানোর ব্যাপারটি সম্পর্কেও কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী গণকযন্ত্রটি কিন্তু কোন ভাষা, অক্ষর কিংবা বর্ণমালা কিছুই বুঝে না। সে বুঝে শুধু সংখ্যা। একথা শুনে আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে যদি গণকযন্ত্র শুধু সংখ্যাই বুঝে তবে আমরা কম্পিউটারে A B C D লিখি বা দেখি কিভাবে। আসলে কম্পিউটারে প্রতিটি অক্ষরের জন্য সংখ্যা বরাদ্দ থাকে। কম্পিউটারে কোন লেখা দেখার জন্য ফন্ট প্রয়োজন হয়। ফন্টের কাজ হলো এই সংখ্যাকে ছবির মতো করে দেখানো। ফন্ট ফাইলে প্রতিটি সংখ্যার জন্য একটি করে অক্ষরের ছবি ম্যাপিং করা থাকে। সেজন্যই ফন্ট ফাইলটি ইনস্টল করা না থাকলে আমরা বাক্স দেখি। সাধারনত আমরা যেসব অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি তার বেশির ভাগই ইংরেজি ভাষায়। সেজন্য ইংরেজি ভাষায় ফন্ট পাওয়া বা কম্পিউটারে ইংরেজির ব্যবহার খুবই সহজ। ঝামেলার শুরু যখন আপনি কম্পিউটারে অন্য কোন ভাষা ব্যবহার করতে চাইবেন। আর সেই ঝামেলাটির সমাধান করার জন্যই ইউনিকোডের আবির্ভাব। এর কাজ হলো বিশ্বের সবগুলো ভাষাকেই গণকযন্ত্রের কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলা। আর এই কাজটি যে প্রতিষ্ঠান করছে তার নাম ‘ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম’। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা এবং এর কাজ হলো বিশ্বের প্রতিটি ভাষার প্রতিটি অক্ষরের জন্য একটি করে নম্বর প্রদানের মাধ্যমে একে গণকযন্ত্রের সাথে পরিচিত করে তোলা, সেটা যে প্লাটফর্মের জন্যই হোক, যে প্রোগ্রামের জন্যই হোক, আর যে ভাষার জন্যই হোক । যেকোন ব্যাক্তি বা সংস্থা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ গ্রহনের মাধ্যমে ইউনিকোডের বিস্তারে কাজ করে যেতে পারেন। মাইক্রোসফট, এ্যাপল, আইবিএম সহ বিশ্বে নামী দামী প্রায় সব ধরনের কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নির্মাতা ইউনিকোডের সাথে তাল মিলাতে শুরু করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম এবং ব্রাউজারে ইউনিকোড সমর্থন রয়েছে। এছাড়া আরোও অনেক প্রতিষ্ঠান ইউনিকোড সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

বাংলা ভাষায় ইউনিকোড আসে একটু দেরিতে; ২০০০ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে। এটি ছিল ইউনিকোড ৩.০ সংষ্করন। তবে প্রথমদিকে এতে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছিলো। এতে খন্ড-ত (ৎ), ক্ষ, রেফ, য-ফলা, দাঁড়ি ইত্যাদি ছিল না। এর ফলে শুরুতে অনেক বিতর্ক দেখা দেয়। এসব সমস্যার অনেকগুলোই ইতোমধ্যে সমাধান করা হয়েছে বা সমাধান করার চেষ্টা চলছে। আমাদের বাংলা ভাষা অনেক আগেই ইউনিকোডে যুক্ত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা এবং উদ্যোগের অভাবে তা সঠিক সময়ে হয়নি। বাংলাকে ইউনিকোডে যুক্ত করার ব্যাপারে আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন উদাসীন। তারা এর বিশেষত্ব অনুধাবন করতে অনেকখানি বিলম্ব করে ফেলেছেন। আসলে সত্যি কথা বলতে কি, বাংলা ভাষাকে ইউনিকোডে যুক্ত করার জন্য এবং প্রথমদিকের সমস্যাগুলো দূর করার জন্য বাঙ্গালীদের চেয়ে কয়েকজন বিদেশীই বেশি ভূমিকা পালন করেছেন। এই বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তবে আশার ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের দেশের বেশ কিছু তরুন প্রযুক্তিবিদ স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাংলা ইউনিকোড টাইপিং এডিটর, ফন্ট ইত্যাদি ডেভোলপের করে তথ্যপ্রযুক্তিতে ইউনিকোড প্রযুক্তির বিকাশে ভূমিকা রাখছেন। এসব সফটওয়্যার এবং ফন্টের বেশির ভাগই একদম বিনামূল্যে পাওয়া যায়। বাংলা ইউনিকোড টাইপিং এডিটরের ক্ষেত্রে ‘অভ্র’ নামের একটি অসাধারন সফটওয়্যার ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

তথ্য সংগৃহীত হয়েছে বিপ্রতীপ ব্লগ থেকে।
 

পাঠকের প্রতিক্রিয়া

কিছু কথা

সফটওয়ার ও ওয়েবওয়ারের বিভিন্ন টিপ্‌স, টিউটোরিয়াল, হ্যাক্‌স, টেমপ্লেট বা থিম্‌স ইত্যাদি নিয়েই আমি ব্লগ লিখছি। আমার প্রধান আগ্রহ ব্লগিং টিপস। এছাড়াও প্রযুক্তির বিচিত্র বিষয় নিয়ে মত বিনিময়, সমস্যা ও তার সমাধান এবং আলোচনা করার জন্য এই ব্লগ খুলেছি। আশা করি আপনি নিরাশ হবেন না। এই ব্লগের সব লেখাগুলো যেকোন মিডিয়ায় এই লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশ করতে পারবেন। বিস্তারিত পড়ুন....

Search This Blog

© 2009-2014 Bangla Hacks | Design by: Bangla Hacks. Powered by: Blogger