স্থানঃ ওয়াইডেন স্কুল মিলনায়তন
গ্লস্টার, ইংল্যান্ড, যুক্তরাজ্য।
সময়ঃ ১২৩০, ২১শে ফেব্রুয়ারি,২০১০
প্রযোজনা এবং উপস্থাপনা সানজিদা সামসু সোমা, সাকিনা চৌধুরি এবং মোর্শেদ আখতার বাদল।
সহযোগিতাঃ টমি রিচেস, গ্রামার স্কুল এবং ওয়াইডেন প্রাইমারি স্কুল, গ্লস্টার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য অংশ গ্রহন কারীদের প্রস্তুতি এবং মহড়া পরিচালনা করেছেন সানজিদা সামসু সোমা। এই সব অংশ গ্রহন কারিরা তাদের ক্ষুদ্র জীবনে এ ধরনের কোন অনুষ্ঠানে যোগ দেয় নি এমনকি তারা বাংলা পড়া লেখা বা কথা বলা কোনোটাই জানে না। তাদের নিয়েই সাকিনা চৌধুরির একান্ত সহযোগিতা পেয়ে সানজিদা সামসু সোমা এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছেন সানজিদা সামসু সোমা।
এই শহরে বেশ কিছু তথা কথিত বাঙ্গালি বাস করলেও অনুষ্ঠানে তেমন কোন দর্শক উপস্থিত ছিল না যদিও দিনটি ছিল এদেশের সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবি বার এমনকি এ সম্পর্কে কোন আগ্রহ প্রেরণা বা মন্তব্য বা ভবিষ্যতের জন্য কোন সহযোগিতার আশ্বাস বানী পাওয়া যায় নি। টমি রিচেস এর প্রতিনিধি হিসেবে জ্যাকি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।
এই দিনের উৎপত্তি এবং তাৎপর্য পাঠ করে জনাব মোর্শেদ আখতার বাদলঃ এটি নিম্নে দেয়া হলোঃ এর সাথে রয়েছে কিছু ছবিঃ
২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৯৯ সালে UNESCO এ দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষনা করেছে। ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর UNESCO সদর দপ্তর সহ সকল সদস্য রাষ্ট্রে দিনটি পালন করা হয়। জাতিসংঘ-ও একে স্বিকৃতি দিয়েছে।
বাংলাদেশের ‘শহীদ দিবস’ বা ‘ভাষা আন্দোলন’ দিবসটিকে আন্তর্জাতিক সম্মান দিতে-ই UNESCO বিশেষভাবে এ দিনটিকে বেছে নেয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ হিসেবে। ১৯৫২ সাল থেকেই বাংলাদেশে দিনটি বিশেষ মর্যাদার সাথে স্মরন করছে। বাংলাদেশে এটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে, বাংলাভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে যাঁরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, জীবন দিয়েছেন নিঃস্বার্থভাবে তাঁদেরকে শ্রধ্বা জানাতে।
বাংলা ভাষায় ২১শে বলতে ২১শে ফেব্রুয়ারি-কেই বোঝায় সাধারন ভাবে। গভীর শ্রদ্বা আর মমতায় স্মরন করা হয় ‘৫২-র এ দিনটিতে বাংলা ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদেরকে।
যা ঘটেছিল ’৫২-র এই দিনটিতে
১৯৫০-৫২ সালে সেসময়কার পূর্ব পাকিস্তানের জনগন বিদ্রোহ করে শাসকদের অন্যায় সিদ্বান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে। নানা অজুহাতে তারা নানা রকম বৈষম্যমূলক আচরন করতে থাকে দীর্ঘদিন ধরে। পরিস্থিতি চরম আকার নেয় যখন তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গভর্নর ঘোষনা করে যে, ‘উর্দু এবং উর্দু-ই হবে সারা পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা’। এর পরপর-ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ সহ সমস্ত ছাত্র সমাজ বিভাগীয় ধর্মঘট পালনের সীধ্বান্ত নেয় ভাষার ব্যাপারে সমধিকারের দাবীতে। এতে সতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহন করে সমাজের নানা স্তরের মানুষ। শাসকগোষ্ঠী ভয় পেয়ে ১৪৪ ধারা বা কার্ফু জারী করে, যার সাধারন মানে হল সমস্ত মিটিং বা জনসমাবেশ নিষিধ্ব। কিন্তূ ছাত্র সমাজ এই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিভিন্ন দিক থেকে একে একে জড়ো হতে থাকে মিছিলের উদ্দেশ্যে। পুলিশ আরো ভয় পেয়ে ঘাবড়িয়ে যায়। গুলি ছোঁড়ে সমাবেশের উপর। রক্তাক্ত হয় ঢাকার রাজপথ। সাথে সাথে মারা যায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার সহ আর অনেকে।
এই যে আন্দোলন, রক্ত ঝরা ইতিহাস বাংলাভাষার – এটিই ‘ভাষা আন্দোলন’ হিশাবে পরিচিত। আর এ দিনটি পরিচিতি পায় ‘শহীদ দিবস’ হিসাবে।
শহীদ মিনারঃ
এই আন্দোলনে মৃত্যুবরনকারীদের কথা মনে রেখে ২৩শে ফেব্রু, ’৫২ কোনো এক সাহসী প্রান ‘শহীদ মিনার’-এর ভিত্তি গেঁথে যায় ঠিক ঘটনার স্থানটিতে। কিন্তু ২৬ তারিখে পুলিশ তা ভেঙ্গে ফেলে। স্থায়ী শহীদ মিনারের নকশা করেন প্রখ্যাত ভাস্কর হামিদুর রহমান। বিশেস এ নকশাটি প্রকাশ করছে মা তার সন্তানদেরকে আগলে রাখছেন পরম মমতায়।
দিনটি গভীর মমতায় আর শ্রধ্বায় স্মরন করা হয় বাংলাদেশ সহ ভারতের বিশেস কিছু স্থানে। প্রতি বছর ২১শের প্রথম প্রহর থেকে-ই লাখো মানুষ জড়ো হয় শহীদ মিনারের বেদীতে খালি পায়ে, ফুল হাতে তাদের সমস্ত শ্রধ্বা জানাতে। পরনে থাকে শোক প্রকাশের সাদা-কাল পোষাক।
দিনটি সরকারী ছুটি-র দিন। ‘বাংলা একাডেমী’-র আয়জন মাস ব্যাপী বই মেলা, নানা সংগঠনের সাহিত্য প্রতিযোগীতা আর জাতীয় সাহিত্য পুরষ্কার ঘোষনা – সবই ‘একুশে উদযাপনের অন্তর্গত।
ভাষা আন্দলনের মাঝ দিয়েই বপন করা হয়েছিল স্বাধীনতা আন্দলনের বীজ। সে তো আরেক ইতিহাস, যেখানে শহীদ হয়েছেন ৩০ লাখ মানুষ। আমাদের পরবর্তী আলচোনায় থাকবে সে প্রসঙ্গ।